জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কর্ণফুলীর কালুরঘাট সেতু অবিলম্বে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের আহবান জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপামর বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর পক্ষে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের স্মারকলিপি
জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কর্ণফুলীর কালুরঘাট সেতু অবিলম্বে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের আহবান জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপামর বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর পক্ষে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের স্মারকলিপিতে যা বলা হয়েছে :
বরাবরে : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তেজগাঁও
ঢাকা
(চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে -
তারিখ-২৪/১১/২০২২ ইং)
বিষয়: চট্টগ্রামের তথা জাতীয় অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কর্ণফুলীর কালুরঘাট সেতু অবিলম্বে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের আহবান জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপামর বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর পক্ষে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের স্মারকলিপি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনি দলমত নির্বিশেষে আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় এবং সবার প্রিয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী | আর তাই আমরা বৃহত্তর চট্টগ্রাম বাসীর পক্ষ থেকে এক প্রকার বাধ্য হয়েই আজ অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এই স্মারকপত্র আপনারই বরাবরে প্রেরণ করছি, কারণ আপনার নির্দেশ ও আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও আপামর বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবি কালুরঘাট সেতু নির্মাণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কতৃপক্ষের
কালক্ষেপন ও দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে এখন জনমনে দারুণ অনিশ্চয়তা, হতাশা এবং ক্ষোভ বিরাজ করছে । আমাদের এই আবেদনের মাধ্যমে আপনার বরাবরে আমরা চট্টগ্রামের আপামর জনতার পক্ষ থেকে মানুষের যে হতাশা চলছে সেটি অবগত করার পাশাপাশি এই অবস্থার নিরসনের জন্য আপনার সুদৃঢ় হস্তক্ষেপ কামনা করাটাই মূল উদ্দেশ্য |
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
জাতীয় অর্থনীতির প্রাণ কেন্দ্র চট্টগ্রামের দক্ষিণ অংশের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই ঐতিহ্যবাহী কালুরঘাট সেতু। এটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৩০ সালে রেল সেতু হিসাবে। পরবর্তীতে এটিতে সড়কও সংযুক্ত করা হয়। এটি একলাইনের একমুখী রেল ও সড়ক সেতু যার একদিক থেকে গাড়ি আসলে আরেক দিক থেকে গাড়ি বন্ধ রাখতে হয়। এভাবে অনেকদিন ধরে কষ্ট স্বীকার করতে হলেও এর উপর দিয়ে যাতায়াত করছেন প্রতিদিন প্রায় এক লক্ষ লক্ষ মানুষ। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাতায়াতও ছিল এই সেতুটি। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পূর্ব পটিয়া, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া, শহরের চান্দগাঁও ও মোহরা এলাকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই সেতুর ওপর নির্ভরশীল। ৭০০ মিটার দীর্ঘ ১০ মিনিটের এই পথ যেতে এখন সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। সেতুতে ওঠার জন্য সব সময় দুদিকে গাড়ির দীর্ঘ সারি থাকে।মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় রেলওয়ে সেতুটিকে ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এরপর ২০১১ সালে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একদল গবেষকও এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দেয়। এসব প্রেক্ষিতে আপনি অনেক আগেই নির্দেশ দিয়েছেন কালুরঘাটে সম্পূর্ণ নতুনভাবে আধুনিক মানের সড়ক-রেল সেতু নির্মাণের জন্য |
গত ১৩ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, "কালুরঘাট সেতুর কাজ আগামী বছরের মধ্যেই শুরু হবে। কালুরঘাটের উপর একটি রেল সেতু এবং একটি সড়ক সেতু হবে। রেল সেতুর অর্থায়ন করবে দক্ষিণ কোরিয়া। সড়ক সেতুর ব্যাপারেও কোরিয়ার সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে। .......আমাকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, দ্রুত যেন কালুরঘাট সেতুর ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়। এই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যেই কালুরঘাট সেতুর কাজ দৃশ্যমান হবে" | পরবর্তীতে বর্তমান রেল মন্ত্রীও বলেছিলেন ২০২১ সালের শুরুতেই কালুরঘাট সেতুর কাজ শুরু হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়.এসব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি | আমরা জেনেছি যে, একেনেক থেকে কয়েকবছর আগে প্রকল্পটি কেন জানি ফেরত এসেছে। ২০১৮ সালে যেখানে প্রস্তাবিত সেতুর বাজেট ছিল ১২০০ কোটি, এখন নতুন ডিজাইনে যেটি করা হবে তাতে নাকি ৬০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।ডিজাইন রি-ডিজাইন আর খরচ বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়ার মধ্যে বার বার চক্কর খাচ্ছে এই প্রস্তাবিত নতুন কালুরঘাট সেতু | বাংলাদেশে আর কোন প্রকল্পে এসব ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমরা যারা আজ এই স্মারকলিপি পাঠাচ্ছি তারাই চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার দীর্ঘস্থায়ী নিরসনসহ সার্বিক উন্নয়ন আন্দোলন করছি ১৯৮৮ সাল থেকে দলমত নির্বিশেষে আপামর বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে| | পাঁচ শথাধিক সংগঠনের সমর্থন নিয়ে আমরা চট্টগ্রামের উন্নয়নে ১৫ দফা ভিত্তিতে বহু আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল কর্ণফুলী একাধিক নতুন সেতু নির্মাণ করে জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রামকে আরো অবদান রাখার সুযোগ করে দেওয়া। ১৯৮৯ সালে এরশাদ আমলে উন্নয়ন আন্দোলনমুখী চট্টগ্রামবাসীকে কোনো রকমে শান্ত করতে নির্মিত হয়েছিল আনোয়ারা থানা সংলগ্ন যেন তেন প্রকারের একটি সেতু যেটি শাহ আমানত সেতু নাম দিয়ে আপনার উদ্যোগে নতুন ভাবে করা হয় | যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে উন্নয়নে নতুন দ্বার খুলে যাবে। সেটি আবারো প্রমাণিত হয়েছে আপনার উদ্যোগে স্বপ্নের পদ্মা সেতু অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে নির্মাণের মাধ্যমে। যাই হউক, ২০১৫ সালে আমরা চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম নাম নিয়ে নতুনভাবে সংগঠিত হই এবং আপনার বরাবরে এ যাবৎ জলাবদ্ধতা, হোল্ডিং ট্যাক্স, কালুরঘাট সেতু ইত্যাদি বিষয়ে একাধিক স্বারকলিপি দিয়েছি |
আমরা চট্টগ্রামের মানুষ সব সময় আপনার উদ্যোগ ও চট্টগ্রামকে নিয়ে আপনার ভালোবাসাকে গুরুত্ব দিই এবং আমরা মনে করি আপনি কর্ণফুলির টানেল, লিংক রোড, ফ্লাইওভার, জলাবদ্ধতা মেগা প্রকল্প ইত্যাদির মাধ্যমে আপনি আপনার অন্তরিকতা প্রমাণ করেছেন এবং আরো করে যাচ্ছেন সে ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
শাহ আমানত সেতুটি হওয়ার সময় থেকে এক শ্রেণীর ভূমি ব্যবসায়ীয়া যারা অতি কম মূল্যে ভূমি কিনে রেখেছেন সেই শাহ আমানত সেতুর সড়কের পাশেই তারই পরবর্তীতে কেউ কেউ কালুরঘাট সেতুটির গুরুত্ব কমিয়ে বক্তব্য রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই কালুরঘাট সেতু একটি ঐতিহ্যবাহী সেতু। এখানে নতুন সেতু না করলে অন্যান্য যে উন্নয়ন হচ্ছে সেগুলো বৃহত্তর চট্টগ্রাম বাসীর কাছে এক ধরনের ম্লান হয়ে যাবে। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী নয়, বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর তথা দেশবাসীর একটি গণ দাবিতে পরিনত হয়েছে এটি i সম্প্রতি এই দাবিটি নিয়ে আমরা করেছি গণ অনশন | আমাদের দাবি. দেশে অর্থনৈতিক মন্দার অজুহাতে যেন কালুরঘাট নতুন সেতু প্রকল্পটির অগ্রাধিকার যেন ব্যাহত না হয় |
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
এই ক্ষেত্রে দেখছি, সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কিংবা মন্ত্রণালয়ে যারা দায়িত্বে রয়েছেন এই বিষয়ে প্রকল্প চুড়ান্ত করা বা ডিজাইন করা নিয়ে বার বার কালক্ষেপণ করছেন। আপামর চট্টগ্রামবাসী দেখতে চায় সেতুটির কাজ কখন শুরু হবে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার হাতেই সবকিছুর চাবিকাঠি রয়েছে। আপনার সুদৃঢ় নির্দেশনার মাধ্যমে সম্ভব হবে অতি শিগগিরই তথা আগামর বছরের মার্চের মধ্যেই এটির কাজ শুরু করা। পদ্মা সেতু যেটি আপনি জরুরি ভিত্তিতে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করেছেন, সে তুলনায় কর্ণফুলীর কালুরঘাট সেতু তেমন বড়ো কিছুই নয় । কর্ণফুলীর কালুরঘাট সেতুটি হলে আমরা মনে করি, দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রাম -কক্সবাজার সড়ক এবং রেল যোগাযোগ এবং অনেক শিল্পকারখানা এবং ব্যবসা বানিজ্য এবং আবাসনের উন্নতি হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
উল্লেখযোগ্য যে, আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আপনি বাস্তবায়ন করেছেন, সেটি হচ্ছে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ করা। আমাদের আহবান ছিল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন লাইন সম্প্রসারণ |ককালুরঘাট সেতু যতই বিলম্বিত হবে ততই দেখা যাবে নতুন কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন যোগাযোগে তেমন সুফল আনবে না | এ বিশাল প্রকল্পের সাথে কর্ণফুলী কালুরঘাট সেতুটি নির্মাণ সংযুক্ত থাকা উচিত ছিল।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
উপরোক্ত অবস্থার পরিপেক্ষিতে আমরা আপনার নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি, আগামী ৪ঠা ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জনসভায় আপনি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে নির্দেশ দিন যাতে করে আর কালবিলম্ব না করে প্রকল্পটি চুড়ান্ত করা হয় এবং এর নির্মাণ কাজ আগেই মার্চ মাসের মধ্যেই যেন শুরু করা হয় |